Header Ads Widget

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন

শিবিরের হামলায় রক্তে রঞ্জিত মতিহার চত্বর

 

১৯৯৩ সালে ছাত্র নেতাদের উপর শিবিরের হামলার প্রতিবাদে ছাপানো পোস্টার

আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কালো দিন। ১৯৯৩ সালের এই দিনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।

শিবির ক্যাডারদের বর্বরোচিত হামলায় সেদিন ক্যাম্পাসে শহীদ হন ছাত্র ইউনিয়নের তপন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন ও বিশ্বজিৎ। তাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় মতিহারের সবুজ চত্বর।

৯০ এর দশকে দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়েছে। কিন্তু এরপর যেন প্রগতিশীল চেতনার গভীরতায় চিড় ধরেছে। ফিকে হয়ে গেছে শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধতা। তাদের আত্মত্যাগ ভুলতে বসেছেন তাদেরই সহযোদ্ধারা।
তবে দীর্ঘসময় পর এবার রাকসু ও রাবির বিভিন্ন দলের সাবেক ছাত্রনেতারা দিবসটি নিয়ে একটি যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে মুক্তিযদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও শোষণহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সাবেক তারা।

১৯৯১ সালে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে জামায়াত দলটিকে সমর্থন দেয়। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। এরপর সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রশিবির। হাত ও পায়ের রগ কেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এমনকি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ছাত্রশিবির ক্যাডারদের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাননি।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের শেষ দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে এবং ক্যাম্পাসে আগ্রাসী হয়ে ওঠে শিবিরের আচরণ। প্রতিটি হলের গেটে অবস্থান নেয়া, বিরোধী মতামতের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন এবং গান পাউডার দিয়ে আবাসিক হলগুলোর ক্ষতিসাধন করতে থাকে নরপশুরা।

এ ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির মুখে ক্যাম্পাসে সক্রিয় অন্যসব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে গড়ে তোলা হয় শিবিরবিরোধী সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য। এর পরপরই ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি  বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রশিবির। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
এ সময় ছাত্রশিবির ক্যাডারদের চরম নৃশংসতায় শহীদ হন ছাত্র ইউনিয়নের তপন, ছাত্রদলের নতুন ও বিশ্বজিৎ। এ ঘটনায় ক্ষব্দ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে নিহত হয় শিবিরের দুজন কর্মী।

সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ এবং ৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শিবিরের পরিকল্পিত সন্ত্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা  রেখেছে। ওদের অত্যাচারে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হতে থাকেন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থায় একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর শের-ই বাংলা হলে বহিরাগত সশস্ত্র শিবির ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী ক্রিকেটার জুবায়ের চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়েই ক্যাম্পাসে তাদের দখলদারিত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ ততোদিনে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ছাড়া।

ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে শিবিরের আধিপত্য যতো বাড়তে থাকে, তাদের আগের নৃশংসতাগুলো চাপা পড়ে নতুন নতুন ঘটনা সামনে আসতে থাকে। কিন্তু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই দিবসগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে না দীর্ঘসময় ধরে। এবারো এর খুব একটা ব্যতিক্রম নেই।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি জোটে থাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের দুই কর্মী নিহত হওয়ার দিনটিতে তেমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। আর ছাত্র ইউনিয়ন দিনটিকে স্মরণ করলেও এ নিয়ে বড় কোনো আয়োজন নেই বললেই চলে।

Post a Comment

0 Comments