Header Ads Widget

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন

চট্টগ্রামে ‘শিবিরের বর্বরতা’, ফেসবুকে গা শিউরে ওঠা ভিডিও

 

প্রাণ বাঁচানোর জন্য পাইপ বেয়ে নিচে নামার এমন চেষ্টার পরও পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ছবি: সময় সংবাদ

ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, নগরীর মুরাদপুরে ভবনের উপর থেকে কয়েকজনকে ফেলে দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বর অবস্থায় নিচে পড়ে আছেন কয়েকজন। যারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। নির্মম নির্যাতনের মুখে প্রাণে বাঁচাতে অনেকে ভবনের বিভিন্ন তলার জানালা গ্রিল ধরে ঝুলে ছিলেন। কেউ কেউ করছিলেন বাঁচার আকুতি। কিন্তু বর্বরতা থামাননি ছাদের ওপর দেশি-বিদেশি ধারালো অস্ত্রহাতে থাকা আন্দোলনকারীরা। যাদের বেশিরভাগই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের নেতাকর্মী।


ভিডিওতে দেখা যায়, যারা দেয়াল থেকে শুরু করে কার্নিশ ও জানালা ধরে ঝুলে ছিলেন তাদের মারতে ছাদ থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছিলো।

আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওই ভবনের নিচে মাটির ওপর কয়েকজন পড়ে আছেন। বাড়িটির দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছেলেও লাঠি-সোটা হাতে কয়েকজন হামলা করছে। এসব ভিডিও দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে সবচে নৃশংস বর্বরতা বলে দাবি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রামের ষোলশহর। বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরে আসা যাওয়ার শাটল ট্রেনের ওঠানামার স্টেশন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থান হয় এটি।


গত কয়েকদিন ধরে কোটা সংস্কার ধরে যে আন্দোলন চলছে তারও কেন্দ্রবিন্দু ষোলশহর। ফলে সোমবার আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো মঙ্গলবার এই জংশনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা।
ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত এক কর্মীর দাবি, ‘এরআগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করলেও মঙ্গলবার সেখানে অবস্থানের কথা জানিয়েছিল ছাত্রলীগের একটি অংশ। মূলত কোটা আন্দোলনকারীদের সমর্থন নিয়ে ষোলশহর দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলো চট্টগ্রাম ছাত্রদল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে নৈরাজ্য করতে পারে ছাত্রদল ও তাদের সহযোগীরা, তাই তাদের ঠেকাতে মঙ্গলবার দুপুরের আগেই বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা নূরুল আজিম রনি তার অনুসারীদের নিয়ে ষোলশহর স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন নুরুল আজিম রনি। পদ পাওয়ার পর নানা কর্মকাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত হন তিনি। অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন রনি।
প্রাণ বাঁচাতে পাইপ বেয়ে নামছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। 

এমনকি হাটহাজারীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন রনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে সাজা দেন। যদিও পরে জামিনে বের হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর দলের ভেতরে বাইরে চাপের মুখে সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হয় তাকে।

মঙ্গলবারের ঘটনা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, মঙ্গলবার সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন অবরোধ করে। এতে কয়েক ঘণ্টা কক্সবাজারগামী ট্রেন আটকে থাকে। পরে আইআইবির শিক্ষার্থী যাদের বেশিরভাগই শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত তারা বাসযোগে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর স্টেশন এবং মুরাদপুর এলাকায় এলে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, শিবির ও ছাত্রদলের নেতাদের অবস্থান হয় মুরাদপুরে। রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও সেখানে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

মুরাদপুরে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ককটেল বিস্ফোরণসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পর শিবির ও ছাত্রদলের কাছে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেখানে রনি সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই শুধু অবস্থান করায় শিবির, ছাত্রদল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না বলে দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক প্রত্যক্ষদর্শীর।
কয়েক দফার সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে সেখানকার বেলাল কমপ্লেক্সের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে কোটা আন্দোলনকারীরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বাইরে থেকে ঘিরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধর শুরু করেন।

‘ওই ভবনে (বেলাল কমপ্লেক্স) যেসব ছাত্রলীগের কর্মী ছিল তাদের কাঠ এবং লোহা দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। কোটা আন্দোলনকারীদের মার থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই পাইপ দিয়ে ভবন থেকে নেমে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু ছাদ এবং নিচ থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে’- দাবি করেন ছাত্রলীগের আহতদের কয়েকজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনের ছাদে উঠে আন্দোলনকারীরা ভবনের দেয়াল ও জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। যারা গ্রিল ধরে ঝুলে আছে তারা যেন পড়ে যায় সেজন্য ওপর থেকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় কয়েকজন মাটিতে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন।

আহতদের দাবি, যারা মাটিতে পড়ে যান তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনির অনুসারী। প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেয়া নূরুল আজিম রনি আহত হলে তার অনুসারীদের মনোবল ভেঙে যায়, এরপর ছাত্রলীগের অংশটি পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়।

ব্যাপক পিটুনিতে আহতের অনেককে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন মোহাম্মদ ফারুক (৩২) ও মোহাম্মদ ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী । এছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।

নিহতদের একজন ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। যাকে মুরাদপুরের ওই ভবনের ছাদ থেকে নিচে ফেলা দেয়া হয়েছিলো বলে অভিযোগ। যদিও নিহতদের কেউ ছাত্রলীগের কর্মী কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি সময় সংবাদ।
এদিকে রনির অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের দাবি, শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার বিকালে দফায় দফায় হওয়ায় সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল খুব কম। তবে, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ এবং সীতাকুণ্ড থেকে আসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির কর্মীরা সরাসরি অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে ছিল ছাত্রদলও। অথচ নৈরাজ্য প্রতিরোধে শুধুমাত্র নূরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরাই ছাত্রদল ও শিবির ঠেকাতে মাঠে নেমেছিল। 

চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেইট এলাকা থেকে ষোলশহর রেল স্টেশন হয়ে মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা মাত্র এক থেকে দেড় বর্গকিলোমিটারের মধ্যে। আর ষোলশহর রেলস্টেশনের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়ি। নওফেল বর্তমানে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।



Post a Comment

0 Comments